ব্রহ্মান্ড সৃষ্টিতত্ত্বের মূল সূক্ষ্ম উপাদান হল পঞ্চভূত.... ক্ষিতি, অপ্, তেজ, মরুৎ আর ব্যোম্ আর তা পঞ্চতন্মাত্র বা গুণের সমাহার.... রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ ও শব্দ সেই গুণ যা যা আবার আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য। পঞ্চভূত, পঞ্চতন্মাত্র, আর পঞ্চ ইন্দ্রিয় অঙ্গাঙ্গীভাবে একে অপরের সঙ্গে জড়িত। রবীন্দ্রনাথ পঞ্চভূত নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নানা আলোচনা করেছেন যা রবীন্দ্র রচনাবলী খুঁজলেই পাওয়া যায় যার অনেকটাই বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিক তথ্য। কিন্তু তিনি ম্যাজিক দেখিয়েছেন গীতবিতানে.... তাঁর গানে! এই তথাকথিত রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, শব্দকে তিনি শুধু ইন্দ্রিয়গোচর করেন নি.... ইন্দ্রিয় থেকে তা ইন্দ্রিয়াতীত হয়েছে, লোক থেকে লোকোত্তর জগতে উত্তীর্ণ হয়েছে তাঁর একান্ত অনুভবে, অনন্ত বিস্ময়ে! নইলে এমন লাইন তিনি লেখেন কী করে? "অঙ্গবিহীন আলিঙ্গনে সকল অঙ্গ ভরে"! এ কোন্ স্পর্শ? এ কোন্ অনুভব? সন্ধ্যেবেলার মলিন ফুলের গন্ধ এমন অনুভব আনতে পারে? এ রহস্য যে রোমাঞ্চিত করে কোন্ অতলস্পর্শী চেতনাকে! তিনি লিখছেন, "গাঁথিয়া এনেছি, সিক্ত যুথীর মালা, সকরুণ নিবেদনের গন্ধ ঢালা"..... নিবেদনেরও গন্ধ হয়? এ তো লাল গানে নীল সুরের মতো! হয় নিশ্চয়ই.... নিবেদন বা সমর্পণ যে বড়ো নরম.... হয়তো আকুল প্রত্যাশায় ব্যাথাতুর, জলে ভেজা যুঁই ফুলের মতো আনত, স্নিগ্ধ, সুগন্ধী! এমন তুলনা তো আমাদের মাথায় আসবে না! আমরা তাই তাঁর গানে একটা তন্মাত্র বেছে নিলাম..... গন্ধ!! ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে এই গন্ধের..... তাঁর একশটিরও বেশী গানে.... বিভিন্ন পংক্তিতে.... যে গন্ধ শুধু নাসিকা নির্ভর নয়.... অনেক না বলা কথা, কান্না হয়ে ঝরে পড়ে এই সৌরভে। অবশ্যই সেখানে বৃষ্টিস্নাত যুঁই, কেয়া, রজনীগন্ধা, বকুল, মালতীলতা তো আছেই, তার সঙ্গে আছে ভিজে মাটির গন্ধ, শষ্য ক্ষেতের ঘ্রাণ, অচেনা নারীর চুলের সুবাস, বসনের গন্ধ, বারি-ঝরা জঙ্গলের সোঁদা গন্ধ.... আমের বোলের সুঘ্রাণ..... আবার পূজা পর্যায়ের কোনো কোনো গানে অন্তরের সৌরভের কথাও আছে। তবে সবচেয়ে বিশেষ কথাটি হল এই যে, এই গন্ধ যখন অতীন্দ্রিয় হয়ে উঠেছে তখনই আমরা চমকে উঠেছি। কখনো সে গন্ধ অনুঘটক হয়ে পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করায়, কখনো সে ঘন বর্ষার রাতে বেদনাদূতী হয়ে ওঠে, কখনো আবার সে কোনো সংকেত বার্তাবাহী রূপে ধরা দেয় আবার কখনো সেই পরিমল কস্তুরী মৃগের মতোই নিজের অন্তরে পাগলের মতো কোন্ অমৃত সত্তার সন্ধানী হয়.... আকুল হয়ে ঘুরে ফেরে "গোপনে সৌরভী", "আপনহারা মাতোয়ারা" হয়ে! আমরা যদি এক একটি গানের লাইন নিয়ে ভাবতে বসি তাহলে অকূল পাথারে ভাসি.... ভাবতে গিয়ে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়.... থৈ খুঁজে পাই না.... ঠিক বুঝতে পারি না.... আবার কখনো যেন আভাসে ইঙ্গিতে কিছুটা ধরতেও পারি বুঝি! কিন্তু "দেখা না দেখায় মেশা", "ধরা অধরার মাঝে" সেই অলৌকিক অতীন্দ্রিয় গন্ধে সুবাসিত হতে, শিহরিত হতে বড়ো সাধ জাগে! সে গোপন গন্ধ কখনও অভিসারিকা, কখনো না বলা কথার মধুর বেদন আবার কোথাও বা মহাসমারোহে আসা হঠাৎ প্রেমের বার্তাবহ, সর্বস্ব সমর্পণের অঙ্গীকার......
পঞ্চবিংশতি বছরে ব্রতী র এবারের প্রয়াস, সেই অপার্থিব ঘ্রাণকে অনুভব করা রবীন্দ্রগানে, গল্পে..... আপনারা আসছেন তো ব্রতী র এই আয়োজনে অন্তরে বাহিরে সুবাসিত হতে, সেই "মাধুরী- সুগন্ধে" ?
প্রথমার্ধে আর একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আছে.... "নৃত্যরসে"। যে বিশ্বছন্দের দোলায় জগৎ ও জীবন আবর্তিত, নৃত্য যার প্রতীকী রূপ, সেই জীবন গান বা বিশ্বতান কে আমরা খুঁজব, সুরে, তালে, ছন্দে, অনুষ্ঠান সূচনায়..... আগামী ৮ ই সেপ্টেম্বর'২৪, রবিবার, রবীন্দ্রসদনে বিকেল ঠিক পৌনে পাঁচটায় অনুষ্ঠান। সামান্য অর্থ মূল্য ১০০/- টাকা মাত্র রাখা হয়েছে অনুষ্ঠানের। কোথায় কীভাবে যোগাযোগ করতে হবে বলে দেবো যথাসময়ে, প্রস্তাবনাটুকু করে রাখলাম শুধু.....
আর একটা কথা, সেদিনের গীত,নৃত্য ও বাদ্য, ত্রয়ীর এই মিলিত সমাহার যা "সংগীত" নামে পরিচিত, তার প্রত্যেকটাই হবে লাইভ, প্রতিবারের মতো..... আপনাদের সবাইকে পাশে চাই।